বর্তমান বিশ্বে শিশুদের জন্মগত ত্রুটির মধ্যে জন্মগত হৃদরোগ অন্যতম। প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ৮-১০ জনের জন্মগত হৃদরোগ হয়। মায়ের গর্ভকালীন অবস্থায় শিশু হৃদযন্ত্রে কোনো ধরনের গঠনগত ও কার্যগত সমস্যা নিয়ে তৈরি হলে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলে। দ্রুত নির্ণয় ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি নির্মূল করা সম্ভব।
ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি: ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি একটি আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মায়ের গর্ভকালেই হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটি যেমন—হৃদযন্ত্রে ছিদ্র, প্রধান রক্তনালি ও রক্তনালির ভালভগুলো সংকোচন, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনসহ অন্যান্য জটিল সমস্যা নির্ণয় করা সম্ভব। সাধারণ গর্ভাবস্থায় ১৮-২৪ সপ্তাহের মধ্যে ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়।
কখন করতে হবে: মায়ের ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক সমস্যার মধ্যে মায়ের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে, গর্ভকালে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ইনফেকশন (যেমন : রুবেলা) ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন (উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ ইত্যাদি) রেডিয়েশন এক্সপোজার, অ্যান্টিবডি পজিটিভ কোনো কানেকটিভ টিস্যু ডিজিজ (যেমন : এসএলই), দীর্ঘমেয়াদি বা বহুমেয়াদি কোনো রোগ (যেমন : বাতজ্বর), পরিবারের কারো জন্মগত হৃদরোগ, জিনগত সমস্যা ইত্যাদি রোগ থাকলে মূলত ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়।
সুবিধা : ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফির তিন ধরনের সুবিধা রয়েছে।
প্রথমত, যদি বাচ্চাটির হার্ট সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পাওয়া যায়, তবে এটি মা-বাবার জন্য অত্যন্ত স্বস্তিকর ও আনন্দদায়ক সংবাদ। দ্বিতীয়ত, যদি শিশুর এমন কোনো জন্মগত হৃদরোগ নির্ণয় হয়, যা বাচ্চার জন্মের আগেই বা সঙ্গে সঙ্গে নিরাময় সম্ভব, তাহলে ডাক্তার তা নিরাময় করে মা-বাবাকে একটি সুস্থ সন্তান উপহার দিতে পারেন। ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফির মাধ্যমে শিশুর হৃদরোগের জটিল সমস্যা নির্ণয় করা গেলে জন্মের পরপরই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। তৃতীয়ত, ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে গর্ভপাত করার প্রয়োজন হতে পারে।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. তাহেরা নাজরীন
সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর
ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা