কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগ স্নেক বাইটশীর্ষক সেমিনার

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগ স্নেক বাইটশীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হলো। এতে চিকিৎসুকরা খোলামেলা আলোচনা করে সাপে কামড়ে চিকিৎসা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান আহরণ করেন।

 

এখনও সাপ রুখতে ভরসা কার্বলিক অ্যাসিড। সাপে কাটলে এখনও ডাক পড়ে ওঝার। বিষ ছড়ানো ঠেকাতে ক্ষতস্থান চুষে তার উপরে শক্ত বাঁধনও দেন অনেকে। স্নেক বাইট নিয়ে এমন অসচেতনতার ছবি ছড়িয়ে গ্রাম থেকে শহর-শহরতলিতে।

 

ওঝার পাল্লায় পড়ে ক্যানিংয়ে প্রাণ হারিয়েছে অনেক শিশু। হাসপাতালে ধুঁকছে অনেকে। আবার বহু প্রাথমিক কেন্দ্রের চিকিৎসকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই, সাপে কাটা রোগী এলে ঠিক কী করণীয়। কেননা, এমবিবিএস সিলেবাসে এর চিকিৎসা সম্পর্কে বিশদে বলা নেই।

 

এমন সন্ধিক্ষণে বিশ্ব সর্প দিবসে সাপে কাটা ও তার চিকিৎসা নিয়ে দু’টি পৃথক গাইডলাইন ও পুস্তিকা প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। যদিও সেই বুকলেট সবক’টি আঞ্চলিক ভাষার বদলে শুধুমাত্র ইংরেজি ও হিন্দিতে প্রকাশ করা হলো কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আইসিএমআর-এর কর্তারা মনে করছেন, সাপে কাটা নিয়ে দেশে সচেতনতার যে অভাব রয়েছে, তার বাইরে নেই চিকিৎসকরাও। বিশেষত, এ ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস নেই অনেকের। তাই গাইডলাইনে তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, সাপে কাটলে অ্যান্টি-স্নেক ভেনম সিরাম (এভিএস) দেওয়ার সময়ে রোগীর ওজন বা বয়স হিসেব করার দরকার নেই। প্রথম এক ঘণ্টায় বয়স ও ওজন নির্বিশেষে অন্তত ১০ ভায়াল এভিএস চালাতে হবে। তার পর উপসর্গের উন্নতি হলে এবং না হলে কী করণীয়, তার বিস্তারিত বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।

বলা হয়েছে, এভিএস দিলে অ্যালার্জি হতে পারে কি না, তা পরখ করারও দরকার নেই। অ্যালার্জি হলে তখন না হয় অ্যান্টিডোট স্টেরয়েড দিতে হবে। কিন্তু সাপের কামড় খেয়ে এসেছে, এমনটা সন্দেহ হলেই আগে এভিএস চালাতে হবে। এভিএসের পাশাপাশি দিতে হবে অ্যাট্রোপিন ও নিওস্টিগমাইন ইঞ্জেকশন। রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে, রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমছে কি না। দেখতে হবে, রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯২% বা তার কম হয়ে গেল কি না, মিনিটে ২০ বারের বেশি শ্বাস নিচ্ছেন কি না রোগী এবং অন্তত ৪৫ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখতে পারছেন কি না। অন্যথায় ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৬০ হাজার মৃত্যু হয় স্নেক বাইটে। সাপে কাটার পরে মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ যথাসময়ে হাসপাতালে আসেন।

এই গাইডলাইন যাঁরা তৈরি করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে রাজ্যের সর্প দংশন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রধান চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘এই নির্দেশিকা এবং পুস্তিকা আগামী দিনে বহু মানুষের জীবন বাঁচাবে।’ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সাপে কাটলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে। কার্বলিক অ্যাসিড ছড়িয়ে সাপ আটকানো যায় না। সাপ তথা সরিসৃপ বিশেষজ্ঞ বিশাল সাঁতরা মনে করেন, এই পুস্তিকা যেহেতু চিকিৎসকদের জন্য নয়, একেবারেই সাধারণ মানুষের জন্য, তাই সেটি সব আঞ্চলিক ভাষায় অনুদিত হওয়া উচিত ছিল। আইসিএমআর কর্তারা জানাচ্ছেন, আগামী দিনে সেই অনুবাদও হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *